• বুধবার, ২২ মে ২০২৪, ৮ জৈষ্ঠ ১৪২৮

জাতীয়

সহসা কাটছে না গ্যাস সংকট

  • ''
  • প্রকাশিত ১৬ মার্চ ২০২৪

রহমত আলী খন্দকার:

সরকারের পক্ষ থেকে বারবার আশ্বস্ত করা হয়েছিল রমজান মাস ও সেচ মৌসুমে গ্যাস বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। বিভিন্ন স্থানে গ্যাস সংকট চরমে পৌঁছেছে। উৎপাদন না বাড়া এবং একটি এলএনজি টার্মিনাল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্ধ থাকায় এ পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

গ্যাসের সংকট চলছে আবাসিক, শিল্প-কারখানা, বিদ্যুৎ খাতে। সিএনজি স্টেশনগুলোতে গ্যাসের চাপ কমে গেছে। অন্যদিকে এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। নতুন নতুন গ্যাস কূপ আবিষ্কারের কাজ করছে। সম্প্রতি বিবিয়ানার উৎপাদন বাড়াতে এখানে বসানো হয়েছে বুস্টার। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে এলএনজি টার্মিনাল রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শেষে চালু হতে পারে। তখন গ্যাস সরবরাহ বাড়বে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছে সরবরাহ বাড়ানোর আশ্বাস দেওয়া হলেও শিগগিরই গ্যাস সংকট কাটছে না।

পেট্রোবাংলার বৃহস্পতিবারের দৈনিক গ্যাস সরবরাহ রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২৬৮১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে। এরমধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর গ্যাস ফিল্ড থেকে ৮১৮ মিলিয়ন ঘনফুট, দেশের অভ্যন্তরে গ্যাস উত্তোলনে নিয়োজিত আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর ফিল্ড থেকে ১২৩৯ মিলিয়ন ঘনফুট এবং আমদানি করে সরবরাহ করা হয়েছে ৬২৩ মিলিয়ন ঘনফুট। আর চাহিদার নির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান ঘোষণা না করা হলেও অনানুষ্ঠানিকভাবে ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার মিলিয়ন বলা হয়।

গত বুধবার দেশে তিন হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে মোট গ্যাস সরবরাহ ছিল দুই হাজার ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট। গ্যাস সংকটের কারণে ছয়টি সার কারখানার মধ্যে তিনটি বন্ধ ছিল। বিদ্যুৎ খাতে গ্যাসের এক হাজার ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে ৮৮০ মিলিয়ন ঘনফুট। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৫০০ মেগাওয়াটের মতো ঘাটতি ছিল। গ্যাস অভাবে ১০টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র পুরোপুরি বন্ধ ছিল। আরও ৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্র আংশিক উৎপাদন করেছে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) তথ্য অনুযায়ী ওই দিন বিদ্যুৎ উৎপাদনে মাত্র ৯০৮ দশমিক ১৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে। যা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) চাহিদার অর্ধেকের মতো।

গ্যাস সরবরাহ নিয়ে গত ১৩ মার্চ বিদ্যুৎ ভবন জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, পেট্রোংবাংলা এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। অনুষ্ঠান শেষে তিনি বলেন, আমরা ২০ শতাংশ গ্যাস আমদানি করতাম। একটি এফএসআরইউ (ফ্লোটিং স্টোরেজ রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট) নিয়মিত সার্ভিসিংয়ে থাকায় গ্যাস সরবরাহ ১০ শতাংশ কমে গেছে। সেচকাজের জন্য রাত ১২টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত বিদ্যুৎচালিত পাম্প চালু রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে নেওয়া হয়। আর আগামী ৬ এপ্রিল পর্যন্ত সিএনজি স্টেশন বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় সরকার।

অন্যদিকে শিল্পেও বেহাল অবস্থা। গত ৬ মার্চ পেট্রোবাংলার গণশুনানিতে নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস চাইলেন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্তারা। গ্যাস সরবরাহ না বাড়লে ঈদে কর্মীদের বেতন-বোনাস প্রদান নিয়ে শঙ্কার কথা জানান। গাজী গ্রুপের জিএম আলমগীর আকন্দ বলেন, গ্যাসের সরবরাহ না বাড়ালে খুবই সংকটে পড়বো, উৎপাদন করতে না পারলে আগামী ঈদে বেতন-বোনাস দিতে পারব না।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার গণমাধ্যমকে বলেন, একটি এলএনজি টার্মিনাল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্ধ রয়েছে। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে এটি চালু হতে পারে। তখন গ্যাস সরবরাহ বাড়বে। সে সময় বিদ্যুৎ খাতে ১১০ থেকে ১২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য খাতেও সরবরাহ বাড়বে।

পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, গত জানুয়ারির মাঝামাঝিতে সামিটের এলএনজি টার্মিনালটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্ধ করা হয়। বলা হচ্ছে, ২৫ মার্চ এটি চালু হবে। টার্মিনালটি চালু হলে গ্যাস সরবরাহ বাড়বে। এর আগ পর্যন্ত গ্যাসের সংকট থাকবেই।

রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা গ্যাসের সংকটে সেহেরি রান্না করতে পারছেন না। ইফতারের আগেও গ্যাসের চাপ থাকছে না চুলায়। খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা সাদেকুন নাহার দিলরুবা বলেন, গ্যাস সংকট জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিনের বেলায় গ্যাসের চাপ খুব কম থাকে। রমজানের প্রথম ও দ্বিতীয় দিন রাত ১টার পর গ্যাসের চাপ স্বাভাবিক হয়। আবার ভোর ৪টার আগেই কমে যায়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads